**দায়ভাগ পদ্ধতি** (Dayabhaga system) হলো হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের একটি পদ্ধতি, যা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে প্রচলিত। এই পদ্ধতিটি মূলত হিন্দু সমাজে সম্পত্তির উত্তরাধিকার এবং বণ্টন নিয়ে নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রদান করে। দায়ভাগ পদ্ধতি এবং এর বিকল্প **মিতাক্ষরা পদ্ধতি**র মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে, যা সম্পত্তির অধিকার এবং উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নীতির অনুসরণ করে।
### দায়ভাগ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
দায়ভাগ পদ্ধতির মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
1. **পিতার সম্পত্তিতে সন্তানদের অধিকার**: দায়ভাগ পদ্ধতিতে পিতার জীবদ্দশায় সন্তানেরা পিতার সম্পত্তিতে কোনো উত্তরাধিকার লাভ করেন না। পিতার মৃত্যুর পরই সন্তানরা তাদের অধিকার পায়, যা মিতাক্ষরা পদ্ধতির বিপরীত। এখানে পিতার জীবিত থাকাকালে কোনো সন্তান পৈতৃক সম্পত্তিতে অধিকার দাবি করতে পারে না।
2. **পুত্র ও কন্যার সমানাধিকার**: দায়ভাগ পদ্ধতিতে কন্যাদেরও কিছু পরিমাণে পৈত্রিক সম্পত্তির অধিকার রয়েছে। কন্যারা বিবাহিত বা অবিবাহিত যাই হোক না কেন, পিতার মৃত্যুর পর সম্পত্তির উত্তরাধিকার পেতে পারে।
3. **বিধবার সম্পত্তিতে অধিকার**: পুত্র এবং কন্যাদের পাশাপাশি বিধবাও তার স্বামীর সম্পত্তিতে অধিকার লাভ করেন। তবে, বিধবার এই অধিকারকে সম্পূর্ণ অধিকার না বলে **লাইফ ইন্টারেস্ট** (life interest) বলা হয়, অর্থাৎ, তিনি তার জীবদ্দশায় সম্পত্তির উপর অধিকার রাখেন। তার মৃত্যুর পর সম্পত্তি আবার পরিবারের অন্য উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টিত হয়।
4. **ভাই ও আত্মীয়দের মধ্যে বণ্টন**: দায়ভাগ পদ্ধতিতে যদি কোনো ব্যক্তি সন্তানবিহীন অবস্থায় মারা যান, তবে তার সম্পত্তি তার ভাই এবং অন্যান্য আত্মীয়দের মধ্যে বণ্টিত হয়। এর ফলে পৈতৃক সম্পত্তি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যেও ভাগ হয়।
### দায়ভাগ পদ্ধতি এবং মিতাক্ষরা পদ্ধতির পার্থক্য
দায়ভাগ পদ্ধতি এবং মিতাক্ষরা পদ্ধতির মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে:
- **জন্মের অধিকার**: মিতাক্ষরা পদ্ধতিতে সন্তানদের জন্মের সাথে সাথেই পৈতৃক সম্পত্তিতে অধিকার তৈরি হয়, তবে দায়ভাগ পদ্ধতিতে সন্তানদের অধিকার কেবল পিতার মৃত্যুর পর শুরু হয়।
- **বণ্টন প্রক্রিয়া**: দায়ভাগ পদ্ধতিতে বণ্টন পিতার মৃত্যুর পর শুরু হয়, যেখানে মিতাক্ষরা পদ্ধতিতে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের অধিকার থাকে এবং কন্যারা সাধারণত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না।
### দায়ভাগ পদ্ধতির গুরুত্ব
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু সমাজে দায়ভাগ পদ্ধতি পরিবারের সম্পত্তির ন্যায্য বণ্টনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি পরিবারে কন্যাদের সম্পত্তির অধিকার এবং বিধবার জীবিকা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যদিও এটি নারীদের জন্য পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করে না।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীদের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এই আইনটির আরো উন্নয়ন প্রয়োজন।

