বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়টি মূলত ব্রিটিশ আমলের আইন এবং ভারতীয় উপমহাদেশে প্রণীত বিভিন্ন আইনের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়। তবে বর্তমানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সাথে এই আইনগুলো সংশোধন ও পরিবর্তনের জন্য প্রস্তাবিত হয়েছে।
প্রধান আইনসমূহ
বাংলাদেশে হিন্দুদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার ও বিতরণের ক্ষেত্রে প্রধানত নিম্নলিখিত আইনগুলো প্রযোজ্য: ১. হিন্দু উইলস অ্যাক্ট, ১৮৭০: হিন্দু ব্যক্তি নিজের সম্পত্তি ইচ্ছামত উইলের মাধ্যমে যে কাউকে দিয়ে যেতে পারেন। ২. হিন্দু উইমেন’স রাইটস টু প্রোপার্টি অ্যাক্ট, ১৯৩৭: এই আইন অনুযায়ী বিধবাদের সম্পত্তিতে সীমিত অধিকার আছে। স্বামীর মৃত্যুর পর তারা সম্পত্তির কিছু অংশ ব্যবহার করতে পারেন, তবে সন্তান থাকলে তাদের অংশের সম্পূর্ণ অধিকার নেই। ৩. হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, ১৯৫৬ (ভারতীয় আইন): যদিও বাংলাদেশে এটি সরাসরি প্রযোজ্য নয়, অনেক ক্ষেত্রে এই আইনের নীতি এবং বিধানগুলো বিচারিক পর্যায়ে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
হিন্দু উত্তরাধিকার ও সম্পত্তি বণ্টন পদ্ধতি
বাংলাদেশে হিন্দুদের মধ্যে সাধারণত মিতাক্ষরা এবং দায়ভাগ নামে দুই ধরনের উত্তরাধিকার পদ্ধতি প্রচলিত। মিতাক্ষরা পদ্ধতিতে পিতার সম্পত্তিতে শুধুমাত্র পুত্রের অধিকার রয়েছে, যেখানে নারীরা সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। দায়ভাগ পদ্ধতিতে পারিবারিক সম্পত্তির ব্যাপারে পুরুষ উত্তরাধিকারীরাই সাধারণত বেশি সুবিধাভোগী। তবে বিধবা নারীরা কিছুটা অধিকার পেতে পারেন, যদিও এটি সীমিত।
নারীর সম্পত্তিতে অধিকার ও সীমাবদ্ধতা
বাংলাদেশের হিন্দু সম্পত্তি আইনে নারীদের সম্পত্তির অধিকার অত্যন্ত সীমিত। মিতাক্ষরা পদ্ধতিতে কন্যা বা বিধবারা পৈত্রিক বা স্বামীর সম্পত্তিতে তেমন কোনো অধিকার পান না। শুধুমাত্র বিধবা নারীরা কিছু সীমিত সম্পত্তির অধিকার পান, তবে কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। ২০০৫ সালে ভারতের হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে নারীদের সমান অধিকার প্রদান করা হলেও বাংলাদেশে এখনো তেমন কোনো সংশোধনী আনা হয়নি।
হিন্দু বিবাহ, উত্তরাধিকার ও পারিবারিক সম্পত্তি আইন প্রবর্তনের প্রস্তাব
বাংলাদেশে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংশোধনের জন্য বিভিন্ন সংগঠন ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তারা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আইন সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছে।
সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বাংলাদেশে হিন্দু সম্পত্তি আইন নারীর অধিকারে সীমাবদ্ধতা রেখে চলে আসছে, যা আধুনিক সমাজের সাম্য ও ন্যায়বিচারমূলক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নারীদের সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান আইনগুলোতে সংশোধন আনা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন নারীদের সম্পত্তিতে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সচেষ্ট রয়েছে।
